#জীবনের_অঙ্ক
# মধুমিতা মুখার্জী
নিজের বিরক্তি বোঝাবার জন্য সশব্দে পা ফেলে নাতি বিট্টুর হাত ধরে জীবন বাবু পুরীর হলিডে হোম থেকে সমুদ্রের দিকে চললেন| হলিডে হোমে সকালে বেড টি পাওয়া যায়না আর সেটাই ওনার বিরক্তির কারণ|
সমুদ্রের ধারে চায়ের দোকানে বসে সমুদ্রের শোভা দেখতে দেখতে বেশী করে দুধ চিনি দেওয়া চা য়ে চুমুক দিয়ে বিস্বাদ মেজাজটা একটু একটু ঠিক হচ্ছে|
জীবন রায় বিপত্নীক, অবসর প্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসার| দীর্ঘদিন উচ্চপদে আসীন থাকার ফলে মেজাজ টাও রাশভারী হয়ে গেছে| সবকিছু মনোমতো না হলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়| সৌভাগ্যবশতঃ এতোদিন সব কিছু মনোমতোই পেয়েছেন...স্ত্রী,চাকরি | শুধুমাত্র, বড়োছেলে আর বৌমা ই ওনার জীবনের অঙ্কের সাথে মেলেনি| ছোটো ছেলে অর্ক আর বৌমা মিলি দুজনেই উচ্চ শিক্ষা আমেরিকা থেকে করে ওখানেই মোটা ডলারের মাইনে পেয়ে প্রতিষ্ঠিত| গতবছর নিউজার্সি তে একটা বাংলো কিনেছে| বড় ছেলে সৌম্য বাণিজ্য শাখায় স্নাতক হয়ে কম্পিউটারের কোর্স করে বেসরকারি ছোটো খাটো চাকরি করে| মাঝে মাঝেই চাকরি স্হল পরিবর্তন করে| বড় বৌমা মৌ ও একদম সেইরকম হয়েছে.. প্রথমে একটা ছোটোখাটো চাকরি করতো| বিট্টু হওয়ার পর থেকেই বিগত ছয় বৎসর ধরে ছেলে মানুষ করার অজুহাতে বাড়িতে বসে আছে.. 'যত্তসব'|
অর্কদের কথা কারোর কাছে বলতে গেলে যেমন গর্বে বুক ফুলে ওঠে তেমনই সৌম্যদের কথা বলতে গেলে লজ্জায় মাথা নুয়ে যায়|
অবসরকালীন প্রাপ্ত অর্থ থেকে খরচ করে প্রায় প্রতি বছর গরমকালে অর্কর কাছে যেতে চেষ্টা করেন| ওদের নতুন বাড়িও দেখে এসেছেন| যদিও ওদেশে গেলে বেশ কিছু অর্থ নষ্ট হয় আর ওরা দুজনেই ব্যস্ত বলে সপ্তাহান্ত ছাড়া খুব একা লাগে... তবুও আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী , বন্ধু-বান্ধবদের সম্ভ্রমের দৃষ্টির সামনে এতটুকু অসুবিধা কিছুই নয়| অনেকেই হয়তো এক দু বার ছেলে মেয়ের কাছে গেছেন বিদেশে.. কিন্তু, ওনার মতো প্রতিবছর কারুর সন্তান রা নিয়ে যায়না| উনিও নিজের অর্থ খরচ করে যাওয়ার কথা তোলেন না| ভালোবাসা আর সম্মান তো ওরা খুবই করে..এর থেকে বেশী উনি কখনোই চান নি| সেইজন্যই প্রতিমাসের পেনশনের থেকে বেশ কিছু অর্থ বিদেশ ভ্রমণের জন্য তুলে রাখেন|
সৌম্যরা ওনার বাড়িতেই থাকে| মৌয়ের বাপের বাড়ির অবস্হাও ভালোনা... "কোথায় আর যাবে? থাকুক এখানেই|"
সৌম্যর জামা-জুতো সব কিছুতেই সস্তা খোঁজার অভ্যাস| এই যে বেড়াতে এসেছে সেখানেও বড় হোটেল না ঠিক করে সস্তার হলিডে হোম! উনি তো পেনশন পেলেই নগদ দশ হাজার টাকা সৌম্যর হাতে তুলে দেন| যদিও সেটা প্রায় পুরোটাই ওনার ওষুধ-পথ্যের পিছনে খরচ হয়... তবুও সৌম্যকে তো বাবার খরচ দিতে হচ্ছেনা! তার ওপর কলকাতা শহরে এতো বড় বাড়িতে থাকতে পারছে...সেটাও তো কম কথা নয়|
ছোটো থেকে ছেলেদের সবরকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বড় করেছেন| প্রতিবছর অনেক খরচ করে বেড়াতে নিয়ে গেছেন| এখনতো নিজেরটা সৌম্যরও নিজের ভাইয়ের থেকে শেখা উচিত!
একবার ভেবেছিলেন এই বারের বেড়াবার খরচ টা দেন...কিন্তু, দিলে তো সবারটাই দিতে হবে| সেটা উনি করবেনই বা কেনো?
এই সব স্মৃতি রোমন্হনের মধ্যেই বিট্টু এসে হলিডে হোমে ফেরার জন্য আবদার করলো| যাক্ কিছুক্ষণ খোলা হাওয়ায় থেকে মাথাটা ঠান্ডা হয়েছে| বিট্টুকে নিয়ে হলিডে হোমের দিকে চললেন|
সেখানে পৌঁছেই বিট্টু জেদ ধরলো যে সামনের বাগানের দোলনায় দুলবে | এদিকে তার বাবা-ময়ের কোনো হুঁশ নেই ...এখনো ঘরে বসে আছে| ওনার পক্ষে বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়| বাধ্য হয়ে বিট্টুকে দোলনায় বসিয়ে চললেন তেনাদের ঘুম ভাঙাতে| বারান্দায় উঠে শেষ প্রান্তের ঘরটাই ওদের ... ঘরের কাছে পৌঁছে শুনলেন মৌ এর উত্তপ্ত গলা... এরকম জোরে গলা ওর প্রথম শুনছেন তাই হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পরলেন| যদিও জীবনবাবু আড়াল থেকে কারোর কথা শোনা পছন্দ করেন না তাও কেন যেনো সরতে পারলেননা|
- "তুমি এটা ঠিক করছোনা| বিট্টুর একটা ভবিষ্যত আছে|"
সৌম্যর গলা ভেসে এলো-
"আমায় ক্ষমা করো| ছেলের ভবিষ্যত নিশ্চয়ই ভাববো..তবে তার জন্য বাবাকে বিসর্জন দিতে পারবোনা|"
এবারে মৌ চিৎকার করে বললো, "বাবা তো আমাদের পাশে থেকেও মনে মনে ভাইদের সাথে বাস করেন| কোনো সময়ে কোনো ভাবেই পাশে দাঁড়ান না| আর উনি যখন ১৫ দিন হাসপাতালে থাকলেন তখন ভাই মাত্র দু'দিন ফোনে খবর নিলো আর তুমি রাত দিন এক করে হাসপাতালে পরে রইলে| এখন তুমি তাঁর জন্য ব্যাঙ্গালোরে বদলি হচ্ছে বলে এই ভালো চাকরিটা ছেড়ে দেবে?তুমি তো জানো এখানে চাকরির বাজার কত খারাপ| আমার তো মনে হয় আমরাও বাইরে থাকলে ওনার সম্মান বেড়ে যাবে| আর তাছাড়া .. ওনার বাড়ির মায়া ছেড়ে উনিও তো আমাদের সাথে যেতেই পারেন... একবার বলে তো দেখো|"
সৌম্য ঠান্ডা গলায় বলে উঠলো.. "তুমি তো জানো..মা এই বাড়িটা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তৈরি করিয়েছিলেন| এই বয়সে বাবাকে মায়ের স্মৃতি থেকে আলাদা করার কথা আমি ভাবতেও পারিনা| কিছু একটা ঠিক জুটে যাবে| দয়া করে আর এই প্রসঙ্গ তুলো না|"
জীবনবাবু আর দাঁড়ালেন না| ধীর পায়ে নাতির কাছে চললেন... সত্যি জীবনের অঙ্কটাই উনি ঠিকমতো কষতে পারেন নি|
#countrygirl #village #green #scenery #tour #travellife #tours #tourindia #traveltheworld #travel #travelblogger #traveler
#puri #holiday #home #story
# মধুমিতা মুখার্জী
নিজের বিরক্তি বোঝাবার জন্য সশব্দে পা ফেলে নাতি বিট্টুর হাত ধরে জীবন বাবু পুরীর হলিডে হোম থেকে সমুদ্রের দিকে চললেন| হলিডে হোমে সকালে বেড টি পাওয়া যায়না আর সেটাই ওনার বিরক্তির কারণ|
সমুদ্রের ধারে চায়ের দোকানে বসে সমুদ্রের শোভা দেখতে দেখতে বেশী করে দুধ চিনি দেওয়া চা য়ে চুমুক দিয়ে বিস্বাদ মেজাজটা একটু একটু ঠিক হচ্ছে|
জীবন রায় বিপত্নীক, অবসর প্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসার| দীর্ঘদিন উচ্চপদে আসীন থাকার ফলে মেজাজ টাও রাশভারী হয়ে গেছে| সবকিছু মনোমতো না হলেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়| সৌভাগ্যবশতঃ এতোদিন সব কিছু মনোমতোই পেয়েছেন...স্ত্রী,চাকরি | শুধুমাত্র, বড়োছেলে আর বৌমা ই ওনার জীবনের অঙ্কের সাথে মেলেনি| ছোটো ছেলে অর্ক আর বৌমা মিলি দুজনেই উচ্চ শিক্ষা আমেরিকা থেকে করে ওখানেই মোটা ডলারের মাইনে পেয়ে প্রতিষ্ঠিত| গতবছর নিউজার্সি তে একটা বাংলো কিনেছে| বড় ছেলে সৌম্য বাণিজ্য শাখায় স্নাতক হয়ে কম্পিউটারের কোর্স করে বেসরকারি ছোটো খাটো চাকরি করে| মাঝে মাঝেই চাকরি স্হল পরিবর্তন করে| বড় বৌমা মৌ ও একদম সেইরকম হয়েছে.. প্রথমে একটা ছোটোখাটো চাকরি করতো| বিট্টু হওয়ার পর থেকেই বিগত ছয় বৎসর ধরে ছেলে মানুষ করার অজুহাতে বাড়িতে বসে আছে.. 'যত্তসব'|
অর্কদের কথা কারোর কাছে বলতে গেলে যেমন গর্বে বুক ফুলে ওঠে তেমনই সৌম্যদের কথা বলতে গেলে লজ্জায় মাথা নুয়ে যায়|
অবসরকালীন প্রাপ্ত অর্থ থেকে খরচ করে প্রায় প্রতি বছর গরমকালে অর্কর কাছে যেতে চেষ্টা করেন| ওদের নতুন বাড়িও দেখে এসেছেন| যদিও ওদেশে গেলে বেশ কিছু অর্থ নষ্ট হয় আর ওরা দুজনেই ব্যস্ত বলে সপ্তাহান্ত ছাড়া খুব একা লাগে... তবুও আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী , বন্ধু-বান্ধবদের সম্ভ্রমের দৃষ্টির সামনে এতটুকু অসুবিধা কিছুই নয়| অনেকেই হয়তো এক দু বার ছেলে মেয়ের কাছে গেছেন বিদেশে.. কিন্তু, ওনার মতো প্রতিবছর কারুর সন্তান রা নিয়ে যায়না| উনিও নিজের অর্থ খরচ করে যাওয়ার কথা তোলেন না| ভালোবাসা আর সম্মান তো ওরা খুবই করে..এর থেকে বেশী উনি কখনোই চান নি| সেইজন্যই প্রতিমাসের পেনশনের থেকে বেশ কিছু অর্থ বিদেশ ভ্রমণের জন্য তুলে রাখেন|
সৌম্যরা ওনার বাড়িতেই থাকে| মৌয়ের বাপের বাড়ির অবস্হাও ভালোনা... "কোথায় আর যাবে? থাকুক এখানেই|"
সৌম্যর জামা-জুতো সব কিছুতেই সস্তা খোঁজার অভ্যাস| এই যে বেড়াতে এসেছে সেখানেও বড় হোটেল না ঠিক করে সস্তার হলিডে হোম! উনি তো পেনশন পেলেই নগদ দশ হাজার টাকা সৌম্যর হাতে তুলে দেন| যদিও সেটা প্রায় পুরোটাই ওনার ওষুধ-পথ্যের পিছনে খরচ হয়... তবুও সৌম্যকে তো বাবার খরচ দিতে হচ্ছেনা! তার ওপর কলকাতা শহরে এতো বড় বাড়িতে থাকতে পারছে...সেটাও তো কম কথা নয়|
ছোটো থেকে ছেলেদের সবরকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বড় করেছেন| প্রতিবছর অনেক খরচ করে বেড়াতে নিয়ে গেছেন| এখনতো নিজেরটা সৌম্যরও নিজের ভাইয়ের থেকে শেখা উচিত!
একবার ভেবেছিলেন এই বারের বেড়াবার খরচ টা দেন...কিন্তু, দিলে তো সবারটাই দিতে হবে| সেটা উনি করবেনই বা কেনো?
এই সব স্মৃতি রোমন্হনের মধ্যেই বিট্টু এসে হলিডে হোমে ফেরার জন্য আবদার করলো| যাক্ কিছুক্ষণ খোলা হাওয়ায় থেকে মাথাটা ঠান্ডা হয়েছে| বিট্টুকে নিয়ে হলিডে হোমের দিকে চললেন|
সেখানে পৌঁছেই বিট্টু জেদ ধরলো যে সামনের বাগানের দোলনায় দুলবে | এদিকে তার বাবা-ময়ের কোনো হুঁশ নেই ...এখনো ঘরে বসে আছে| ওনার পক্ষে বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়| বাধ্য হয়ে বিট্টুকে দোলনায় বসিয়ে চললেন তেনাদের ঘুম ভাঙাতে| বারান্দায় উঠে শেষ প্রান্তের ঘরটাই ওদের ... ঘরের কাছে পৌঁছে শুনলেন মৌ এর উত্তপ্ত গলা... এরকম জোরে গলা ওর প্রথম শুনছেন তাই হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পরলেন| যদিও জীবনবাবু আড়াল থেকে কারোর কথা শোনা পছন্দ করেন না তাও কেন যেনো সরতে পারলেননা|
- "তুমি এটা ঠিক করছোনা| বিট্টুর একটা ভবিষ্যত আছে|"
সৌম্যর গলা ভেসে এলো-
"আমায় ক্ষমা করো| ছেলের ভবিষ্যত নিশ্চয়ই ভাববো..তবে তার জন্য বাবাকে বিসর্জন দিতে পারবোনা|"
এবারে মৌ চিৎকার করে বললো, "বাবা তো আমাদের পাশে থেকেও মনে মনে ভাইদের সাথে বাস করেন| কোনো সময়ে কোনো ভাবেই পাশে দাঁড়ান না| আর উনি যখন ১৫ দিন হাসপাতালে থাকলেন তখন ভাই মাত্র দু'দিন ফোনে খবর নিলো আর তুমি রাত দিন এক করে হাসপাতালে পরে রইলে| এখন তুমি তাঁর জন্য ব্যাঙ্গালোরে বদলি হচ্ছে বলে এই ভালো চাকরিটা ছেড়ে দেবে?তুমি তো জানো এখানে চাকরির বাজার কত খারাপ| আমার তো মনে হয় আমরাও বাইরে থাকলে ওনার সম্মান বেড়ে যাবে| আর তাছাড়া .. ওনার বাড়ির মায়া ছেড়ে উনিও তো আমাদের সাথে যেতেই পারেন... একবার বলে তো দেখো|"
সৌম্য ঠান্ডা গলায় বলে উঠলো.. "তুমি তো জানো..মা এই বাড়িটা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তৈরি করিয়েছিলেন| এই বয়সে বাবাকে মায়ের স্মৃতি থেকে আলাদা করার কথা আমি ভাবতেও পারিনা| কিছু একটা ঠিক জুটে যাবে| দয়া করে আর এই প্রসঙ্গ তুলো না|"
জীবনবাবু আর দাঁড়ালেন না| ধীর পায়ে নাতির কাছে চললেন... সত্যি জীবনের অঙ্কটাই উনি ঠিকমতো কষতে পারেন নি|
#countrygirl #village #green #scenery #tour #travellife #tours #tourindia #traveltheworld #travel #travelblogger #traveler
#puri #holiday #home #story
No comments:
Post a Comment