। যেখানে আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে। ধোত্রে-টংলু-তুমলিং।।
।। প্রথম পর্ব- ধোত্রে।।
“Great things are done when men and mountains meet; This is not done by jostling in the street.”
(William Blake)
আমরা তুমলিং যাবো।
যা কথা তাই কাজ, হইহই করে টিকিট কাটা হয়ে গেল, এবার শুধু যাবার অপেক্ষা।
সেই দিনটাও চলে এলো আস্তে আস্তে একদিন। কথা মতো সবাই তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে শিয়ালদা স্টেশন চলে এলাম। যথা সময়ে ট্রেনে উঠে পরের দিন NJP পৌঁছালাম। গ্রুপ ট্রিপ, তাতে কোনো গন্ডগোল হবে না তা কি হয় নাকি। একেই ট্রেনটা আড়াই ঘণ্টা লেট। তার উপর মানেভঞ্জন পৌঁছে জানলাম গেট বন্ধ, তুমলিং যাবার গাড়ি আর যাবে না। এমনকি ট্রেক করেও ওঠা যাবে না। ওখানেই আমাদের রাত কাটাতে হবে। মন কিছুতেই মানছে না। এতদূর এসেও যাওয়া হবে না, এটা কিছুতেই মানতে পারছিলাম না আমরা। যাইহোক অনেক আলোচনা, কথাবার্তার পর ঠিক হলো, তুমলিং না হোক আজ রাতটা আমরা ধোত্রে তে কাটাবো।
ল্যান্ডরোভার করে চললাম আমরা ধোত্রে। এই ল্যান্ডরোভার গুলো এক অদ্ভুত সুন্দর গাড়ি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু পরে ব্রিটিশ রা (চা বাগানের মালিক) ল্যান্ডরোভার নিয়ে আসে দার্জিলিং আর আসাম চা বাগান গুলোতে। ব্রিটিশ রা চলে যাবার পর লোকাল মানুষরা গাড়ি গুলো কিনে নেয় এবং তাদের দৈনন্দিন ব্যাবহারের কাজে লাগায়। মানেভঞ্জন এ সিঙ্গালীলা ল্যান্ডরোভার এসোসিয়েশনের কর্তা অনিল তামাং এর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম এখানে নাকি এখনো কিছু Series I ল্যান্ডরোভার আছে যেগুলো UK রোভার কোম্পানি 1948 সালে লঞ্চ করে আমস্টারডাম মোটর শো তে। আমাদের গাড়ি চালক কেশর গুরুং যে গাড়ীটায় আমাদের নিয়ে গেল সেটা একটা 1954 এর সিরিজ III ল্যান্ডরোভার যেটা উনি উনার বাবার থেকে পেয়েছেন। ল্যান্ডরোভারে চেপে আমরা পৌছালাম ধোত্রে। ধোত্রে !! ছবির মতো সুন্দর একটা গ্রাম। যেখানে খুশি আপনি দাঁড়ান, কাঞ্চনজঙ্ঘা এর অমোঘ রূপ আপনাকে নিরাশ করবে না। ঝাউ, পাইন এর জঙ্গলে বন্য জীবনকে দেখুন একদম কাছ থেকে। ছুঁয়ে দেখুন পাহাড়ের কোলে লালিত এই গ্রামের আনাচ কানাচ, অথবা চলে যান পাকদন্ডী দিয়ে কাছাকাছি নাম না জানা বসতি গুলোতে, দেখুন না প্রকৃতি মায়ের কোলে পথের কোন বাঁকে সেই হারানো “আমি”টাকে দেখতে পাওয়া যায় কিনা? ধোত্রে তে পরিচয় ফাণ্ড লামার সাথে। ওর কথায় ধোত্রে তে বিরাশি পরিবারের বাস, আর এরা সবাই সবার আত্মীয়। কি অদ্ভুত আর সুন্দর তাই না!!
ক্যাম্পফায়ারে বসে ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন আর গান এ এক অসাধারণ অনুভূতি। সত্যি বলছি ওরকম নির্মল আকাশ আমি খুব কম দেখেছি। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হবে তারা গুলো যেন আপনার সাথে কথা বলছে। মাথার ওপর জ্বলজ্বল করছে সপ্তর্ষিমণ্ডল , কালপুরুষ , লুব্ধক। ক্যাম্পফায়ার এর নেবা আঁচের আগুন, পরিষ্কার জ্বলজ্বলে আকাশ, সামনে চাঁদের আলোয় রুপালি কাঞ্চনজঙ্ঘা আর সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড এ বাজছে শচীন কর্তার " বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে..." আপনাকে বাধ্য করবে বার বার পাহাড়ে ফিরে আসতে। এক মুহূর্তে একটা অন্য আমি এর সামনে দাঁড় করিয়ে দেবে। নির্মল আকাশের দিকে তাকিয়ে ওই ঠাণ্ডাতে campfire এর পাশে ঘাসের উপর শুয়ে আকাশের তারা গুনতে গুনতে কখন যে সময় চলে যায় বোঝা ই যায় না।
এত অল্প সময়, সবাই চাইছে যতটা সম্ভব স্মৃতি সংগ্রহ করে নিতে যাতে আগামী কিছু মাস অনায়াসে জাবর কেটে চালিয়ে নেওয়া যায়। শুয়ে বসে থাকতে থাকতে মনে হচ্ছিলো এই রাত যেন শেষ না হয়। দরকার নেই সকাল আসার। চিরকাল যেন কাটাতে পারি এরকমই আকাশের নীচে।
।। প্রথম পর্ব- ধোত্রে।।
“Great things are done when men and mountains meet; This is not done by jostling in the street.”
(William Blake)
আমরা তুমলিং যাবো।
যা কথা তাই কাজ, হইহই করে টিকিট কাটা হয়ে গেল, এবার শুধু যাবার অপেক্ষা।
সেই দিনটাও চলে এলো আস্তে আস্তে একদিন। কথা মতো সবাই তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে শিয়ালদা স্টেশন চলে এলাম। যথা সময়ে ট্রেনে উঠে পরের দিন NJP পৌঁছালাম। গ্রুপ ট্রিপ, তাতে কোনো গন্ডগোল হবে না তা কি হয় নাকি। একেই ট্রেনটা আড়াই ঘণ্টা লেট। তার উপর মানেভঞ্জন পৌঁছে জানলাম গেট বন্ধ, তুমলিং যাবার গাড়ি আর যাবে না। এমনকি ট্রেক করেও ওঠা যাবে না। ওখানেই আমাদের রাত কাটাতে হবে। মন কিছুতেই মানছে না। এতদূর এসেও যাওয়া হবে না, এটা কিছুতেই মানতে পারছিলাম না আমরা। যাইহোক অনেক আলোচনা, কথাবার্তার পর ঠিক হলো, তুমলিং না হোক আজ রাতটা আমরা ধোত্রে তে কাটাবো।
ল্যান্ডরোভার করে চললাম আমরা ধোত্রে। এই ল্যান্ডরোভার গুলো এক অদ্ভুত সুন্দর গাড়ি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু পরে ব্রিটিশ রা (চা বাগানের মালিক) ল্যান্ডরোভার নিয়ে আসে দার্জিলিং আর আসাম চা বাগান গুলোতে। ব্রিটিশ রা চলে যাবার পর লোকাল মানুষরা গাড়ি গুলো কিনে নেয় এবং তাদের দৈনন্দিন ব্যাবহারের কাজে লাগায়। মানেভঞ্জন এ সিঙ্গালীলা ল্যান্ডরোভার এসোসিয়েশনের কর্তা অনিল তামাং এর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম এখানে নাকি এখনো কিছু Series I ল্যান্ডরোভার আছে যেগুলো UK রোভার কোম্পানি 1948 সালে লঞ্চ করে আমস্টারডাম মোটর শো তে। আমাদের গাড়ি চালক কেশর গুরুং যে গাড়ীটায় আমাদের নিয়ে গেল সেটা একটা 1954 এর সিরিজ III ল্যান্ডরোভার যেটা উনি উনার বাবার থেকে পেয়েছেন। ল্যান্ডরোভারে চেপে আমরা পৌছালাম ধোত্রে। ধোত্রে !! ছবির মতো সুন্দর একটা গ্রাম। যেখানে খুশি আপনি দাঁড়ান, কাঞ্চনজঙ্ঘা এর অমোঘ রূপ আপনাকে নিরাশ করবে না। ঝাউ, পাইন এর জঙ্গলে বন্য জীবনকে দেখুন একদম কাছ থেকে। ছুঁয়ে দেখুন পাহাড়ের কোলে লালিত এই গ্রামের আনাচ কানাচ, অথবা চলে যান পাকদন্ডী দিয়ে কাছাকাছি নাম না জানা বসতি গুলোতে, দেখুন না প্রকৃতি মায়ের কোলে পথের কোন বাঁকে সেই হারানো “আমি”টাকে দেখতে পাওয়া যায় কিনা? ধোত্রে তে পরিচয় ফাণ্ড লামার সাথে। ওর কথায় ধোত্রে তে বিরাশি পরিবারের বাস, আর এরা সবাই সবার আত্মীয়। কি অদ্ভুত আর সুন্দর তাই না!!
ক্যাম্পফায়ারে বসে ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন আর গান এ এক অসাধারণ অনুভূতি। সত্যি বলছি ওরকম নির্মল আকাশ আমি খুব কম দেখেছি। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হবে তারা গুলো যেন আপনার সাথে কথা বলছে। মাথার ওপর জ্বলজ্বল করছে সপ্তর্ষিমণ্ডল , কালপুরুষ , লুব্ধক। ক্যাম্পফায়ার এর নেবা আঁচের আগুন, পরিষ্কার জ্বলজ্বলে আকাশ, সামনে চাঁদের আলোয় রুপালি কাঞ্চনজঙ্ঘা আর সাথে ব্যাকগ্রাউন্ড এ বাজছে শচীন কর্তার " বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে..." আপনাকে বাধ্য করবে বার বার পাহাড়ে ফিরে আসতে। এক মুহূর্তে একটা অন্য আমি এর সামনে দাঁড় করিয়ে দেবে। নির্মল আকাশের দিকে তাকিয়ে ওই ঠাণ্ডাতে campfire এর পাশে ঘাসের উপর শুয়ে আকাশের তারা গুনতে গুনতে কখন যে সময় চলে যায় বোঝা ই যায় না।
এত অল্প সময়, সবাই চাইছে যতটা সম্ভব স্মৃতি সংগ্রহ করে নিতে যাতে আগামী কিছু মাস অনায়াসে জাবর কেটে চালিয়ে নেওয়া যায়। শুয়ে বসে থাকতে থাকতে মনে হচ্ছিলো এই রাত যেন শেষ না হয়। দরকার নেই সকাল আসার। চিরকাল যেন কাটাতে পারি এরকমই আকাশের নীচে।
No comments:
Post a Comment