#Dhenkanal : The road less travelled.
রাত প্রায় ন'টা। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঘন্টাখানেক আগে সেই যে কারেন্ট চলে গেছে এখনও তার আসার নাম নেই। কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত একটা রোগাপটকা চাঁদ আকাশের এককোণে পিটপিট করছিলো, কিন্তু মস্তান টাইপের ক'টা মেঘ এসে মুহূর্তের মধ্যে তাকে ধরাশায়ী করে ফেলেছে। আশপাশের কোনো বাড়ি থেকে যে একটু আলো আসবে সে সম্ভাবনাও নেই, কারণ কয়েক মাইলের মধ্যে কোনো বাড়িই নেই। মূল শহর থেকে অনেকটা দূরে ঘন জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ের উপর এই একটাই বাড়ি। নাম 'গজলক্ষী প্যালেস',' স্থানীয় লোকেরা বলে রাজবাড়ি। বাড়ির পিছনেই আরেকটা বড় পাহাড়, আর চারিদিকে শুধু জঙ্গল। সেই জঙ্গলে দিনদুপুরে হাতি ঘুরে বেড়ায়।
এই ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে আপনি ঠায় একঘন্টা ধরে একই জায়গায় বসে আছেন। জায়গা বলতে দোতলার খোলা ছাদ, যাকে বাংলায় terrace বলে। আপনার একটু ভয় ভয় করছে, আবার রোমাঞ্চও লাগছে। কিছুক্ষণ আগে অবধি একটা গুমোট ভাব ছিল, কিন্তু এখন বেশ ফুরফুরে হাওয়া বইছে। হাওয়ার মধ্যে কেমন যেন নেশা ধরানো গন্ধ। কিসের গন্ধ এটা ? মহুয়া ফুলের ? এখানে কি মহুয়া গাছ আছে ? থাকতেই পারে ! এত বড় জঙ্গলে মহুয়া গাছ থাকবে না তা কি হয় ? আচ্ছা, কি একটা প্রাণী আছে না যারা মহুয়া ফুল খেতে খুব ভালোবাসে ? ভাল্লুক কি ? নাকি অন্য কিছু ? নাহ, কিছুতেই মনে পড়ছে না। আজকাল আর কিছুই মনে থাকে না। সারাক্ষণ শুধু ডেবিট-ক্রেডিট, সেলসের টার্গেট, বসের ঝাড়, মিটিং, ওদিকে আবার ইউনিয়নের নেতাদের তেল মাখানো----ধুসস ! লাথি মারি অমন চাকরির মুখে। সব ছেড়েছুড়ে একদিন এই জঙ্গলে চলে আসবো। নে শালা, এবার কত ডেবিট ক্রেডিট নিবি নে ! হাঃ হাঃ হাঃ......
এইসব হাবিজাবি চিন্তা করতে করতে আপনি অলস ভাবে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন। টানা লম্বা দরদালান, তার ওপাশে ড্রইংরুম। ড্রইংরুমের টেবিলে একটা মোমবাতি জ্বলছে। কষ্টিপাথরের মতো জমাট কালো অন্ধকার, তার মধ্যে এক রহস্যময় শিখা। শিখাটার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে কেমন যেন গা শিরশির করে, মনে হয় কোনো একচক্ষু প্রেত নির্নিমেষ দৃষ্টিতে আপনাকে দেখছে। ইশ, কয়েকটা ভুতের গল্পের বই আনলে বেশ হতো। বড়দের হরর স্টোরি না, সেই ছোটবেলায় পড়া ভুত-পেত্নীর গল্প, যে গল্পগুলো পড়ে মনে মনে বলতেন - "হে ভগবান, রাত্তিরে যেন হিসু না পায়।"
এখন নাহয় ফ্ল্যাটে থাকেন, কিন্তু তখন তো আর ফ্ল্যাটে থাকতেন না, থাকতেন সেই নিজেদের একতলা বাড়িটাতে। উঠোন পেরিয়ে বাথরুম, তার পিছনে পাঁচিল, আর পাঁচিলের গায়ে একটা ঝাঁকড়া তেঁতুলগাছ। আহা, কি সব দিন ছিল !
শৈশবের কথা ভাবতে ভাবতে আপনি আনমনা হয়ে গিয়েছিলেন, হঠাৎ একটা পায়ের শব্দে চটক ভেঙে গেল। যেন খুব কাছেই কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছে। আপনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকালেন, কিন্তু ঘরের ভিতরের আবছা আলোয় কাউকে দেখতে পেলেন না। এমনই কপাল যে ঠিক সেই মুহূর্তে একটা দমকা হাওয়ায় মোমবাতিটাও নিভে গেল। এখন চারিদিকে শুধু চাপ চাপ অন্ধকার, তার মধ্যে আপনি, আর আপনাকে ঘিরে এক রহস্যময় পদশব্দ - "ঠক, ঠক, ঠক !"
আওয়াজটা ধীরে ধীরে আপনার দিকে এগিয়ে আসছে। বুনো ফুলের গন্ধটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আপনার স্নায়ু অবশ হয়ে আসছে, মনে হচ্ছে এক্ষুনি বোধহয় অজ্ঞান হয়ে যাবেন। শরীরের শেষ শক্তিটুকু জড়ো করে আপনি চেঁচিয়ে উঠতে গেলেন, কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোলো না।
পায়ের শব্দটা এবার থেমে গেছে।
আপনি দম বন্ধ করে অবধারিত নিয়তির প্রতীক্ষা করছেন, ঠিক তখনই কে যেন ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় বলে উঠলো - "ডিনার রেডি হ্যায় সাব। লাগা দুঁ ?"
না, কোনো রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস বা ভূতের গল্প ফাঁদতে বসিনি। অতটা এলেম আমার নেই। যেটা বলছিলাম সেটা আমার নিজেরই অভিজ্ঞতা। যদি আপনিও এই অভিজ্ঞতার শরিক হতে চান তো চলুন আমার সাথে, কটক থেকে মাত্র পঞ্চান্ন কিলোমিটার দূরে ওড়িশার আরেকটা জেলা ঢেঙ্কানলে।
ঢেঙ্কানল জায়গাটা তথাকথিত ট্যুরিস্ট স্পট হিসাবে তেমন পপুলার নয়, আর সেই জন্যই আদিম ভাবটা এখনও হারায়নি। লোকজন এখানে আসে না তা না, তবে তুলনায় কম। যারা আসে তারা সাধারণত একরাত থাকে, বড়জোর দু'রাত। থাকার জন্য ঢেঙ্কানলে কয়েকটা হোটেল আছে বটে, তবে আপনাদের যেখানে নিয়ে যাবো সেটা কোনো হোটেল নয়, প্রাসাদ ! প্রাসাদের নামটা আগেই বলেছি, মনে আছে ? জানি মনে নেই। অচেনা নাম তো, মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে নামটা অচেনা হলেও প্রাসাদটা কিন্তু আপনারা অনেকেই দেখেছেন, কারণ "রয়েল বেঙ্গল রহস্য" সিনেমার শ্যুটিং হয়েছিল এই প্রাসাদেই। নামটা আরেকবার বলে দিচ্ছি - গজলক্ষী প্যালেস। আশা করি এবার আর ভুলবেন না।
প্রাসাদটা মূল শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একটা নির্জন টিলার মাথায় অবস্থিত। টিলার গা বেয়ে আরেকটা পাহাড় উঠে গেছে। পুরো জায়গাটাই জঙ্গলে ঢাকা, আর সেই জঙ্গলে নাকি হাত বাড়ালেই হাতি ! কথাটা অতিরঞ্জিত তাতে সন্দেহ নেই, তবে হাতি সত্যিই আছে ! বস্তুত হাতির কারণেই প্রাসাদটার নাম "গজলক্ষী প্যালেস।" চলুন এবার তাহলে সেখানে যাওয়া যাক।
হাওড়া থেকে প্রথমে কটক চলুন, তারপর স্টেশন থেকে গাড়ি নিয়ে নেওয়া যাবে। কটক থেকে ঢেঙ্কানলের দৃরত্ব পঞ্চান্ন কিলোমিটার, সময় লাগবে মোটামুটি দেড়ঘন্টা। হাওড়া থেকে ডাইরেক্ট ট্রেনও আছে, তবে হপ্তায় একবার। ইচ্ছে হলে ভুবনেশ্বর থেকেও যেতে পারেন। খুব একটা দূর না, জাস্ট আশি কিলোমিটার।
গাড়িতে যেতে যেতে দৃর থেকে প্রাসাদের লোকেশন দেখেই আপনার চোখ টেরিয়ে যাবে। গেট দিয়ে ঢোকার আগে পর্যন্ত সেই চোখ ট্যারানো ভাব থাকবে, কিন্ত বাড়িটা দেখার পর প্রাথমিক ভাবে একটু হতাশই হবেন। নামে প্রাসাদ হলেও আকৃতিতে একটা বড়সড় বাংলো বই কিছুই না। বাংলোটা তৈরি হয়েছিল রাজামশাইয়ের প্রমোদভবন হিসাবে, তবে বছর কয়েক হলো বাড়ির একটা অংশ homestay হিসেবে চালু করা হয়েছে। বর্তমান কুমারবাহাদুর শ্রী জে. পি. সিংদেও এটার দেখাশোনা করেন, সঙ্গে তাঁর স্ত্রী রাণী নবনীতা। বেশি লোক এখানে আসে না, কারণ জায়গাটার হদিশ খুব বেশি লোক জানে না। যারা আসে তারা অধিকাংশই বিদেশী, সম্ভবত সেই কারণেই ঢেঙ্কানলের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ভাড়াটা লক্ষণীয় ভাবে বেশি। পার ডে পার রুম সাড়ে ছ'হাজার টাকা ভাড়া, দুজনের থাকা এবং তিনবেলা খাওয়া সমেত। এক্সট্রা কেউ গেলে আরো দেড় হাজার লাগবে।
সুযোগ সুবিধা বলতে যে বিশাল কিছু পাবেন তাও না। ঘরগুলো বিশাল, বাথরুমটাও বাড়াবাড়ি রকমের বড়, কিন্তু ঘরে এ.সি. নেই, টিভি নেই, এমনকি জেনারেটর থাকলেও খুব দরকার না হলে সেটা চালানো হয় না। ফরেনারদের কাছে এটাই নাকি জায়গাটার 'USP', কারণ বেশি আধুনিক হলে জঙ্গল-জঙ্গল ভাবটা থাকতো না।
আমরা কোনো ফরেনার নই, নেহাতই ভেতো বাঙালী, অতএব আমরা ভাবতেই পারি যে এত টাকা দিয়ে এখানে থাকতে যাবো কোন দুঃখে ?
প্রশ্নটা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত, যার উত্তরে আমি বলবো স্রেফ একটা কারণেই থাকবেন, সেটা হলো এর লোকেশন। এরকম লোকেশন লাখ টাকা দিয়েও মেলে না। আশেপাশে বাড়িঘর বলতে কিস্যু নেই, টিলার মাথায় শুধু এই একটাই বাড়ি। পিছনে জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়, আর চারিদিকে শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল। প্রাসাদের পিছনদিকে কিছুটা গেলেই একটা বড়সড় পুকুর, সেখানে প্রায়ই নাকি হাতিরা জল খেতে আসে।
রাজবাড়ির খাওয়াদাওয়া খুব ভালো। রাণী নবনীতা রাজস্থানের রাজপরিবারের মেয়ে, এদিকে আবার দারুন রাঁধুনি। তাঁর তত্ত্বাবধানেই অতিথিদের রান্নাবান্না হয়। হোটেলের মতো অনেকরকম পদ তা না, তবে সবগুলো পদই ভীষণ সুস্বাদু।
মোটকথা, কল্পনাতীত একটা পরিবেশে তিন-চার দিনের ছুটি কাটানোর জন্য আদর্শ জায়গা এই গজলক্ষী প্যালেস, তবে একটু খরচসাপেক্ষ ঠিকই !
চলুন এবার আপনাদের একটু সাইটসিইং-এ নিয়ে যাই। ঢেঙ্কানলে বেশ কয়েকটি ট্যুরিস্ট স্পট আছে, তবে কোনোটাই বহুল প্রচারিত নয় বলে ভিড়ভাট্টা কম। প্রথমে চলুন কপিলাস মন্দির। পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত এই শিবমন্দিরটি স্থানীয়দের কাছে খুব জাগ্রত স্থান বলে পরিচিত। মন্দিরে ওঠার রাস্তাটা দারুণ। পাকদণ্ডী বেয়ে বেয়ে উঠতে হয়, নিচে ঢেঙ্কানল শহরের বার্ডস্-আই ভিউ। দারুণ লাগে দেখতে !
এরপর আপনাদের যেখানে নিয়ে যাবো তার নাম সপ্তশয্যা। এটাও একটা পাহাড়ের উপর অবস্থিত। জায়গাটার নৈসর্গিক দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম, বলাই বাহুল্য। পৌরাণিক মতে এখানে নাকি রামচন্দ্র অ্যান্ড কোং তাঁদের বনবাসকালে সপ্ত দিবস এবং সপ্ত রজনী যাপন করেছিলেন। সেই সময়ে সপ্তর্ষিমন্ডলের সেই সাত ঋষি এখানে এসে যজ্ঞ করেন। জায়গাটায় সব মিলিয়ে সাতটা পাহাড় আর সাতটা ঝর্ণা আছে, তবে আমি গুনে দেখিনি। আপনাদের ইচ্ছে হলে গুনে নিন।
এরপর যেখানে আমরা যাবো সেটা সত্যি বেশ ইউনিক জায়গা। জায়গাটার নাম "জোরন্দা" (Joranda), ঢেঙ্কানল থেকে আনুমানিক বত্রিশ কিলোমিটার দূরে। এটা হলো বিশ্বের নবীনতম ধর্মের পীঠস্থান, যার নাম "মহিমা ধর্ম।" এই ধর্মের লোকজন কোনো জাতপাত মানে না, বর্ণ মানে না, এমনকি সাকার বা নিরাকার কোনো ঈশ্বরও মানে না। যাঁকে পূজো করা হয় তিনি হলেন "শূন্য"...... মহাশূন্য !
মন্দির আছে, তবে তার ভিতরে কিস্যু নেই। সব ভোঁ-ভাঁ, শূন্য। সেই শূন্য মন্দিরকেই এঁরা পুজো করেন। যাঁরা আছেন তাঁরা সবাই কৌপীনধারী সাধু, আর বিশাল তাঁদের জটা। মাঘ মাসে এখানে বাৎসরিক উৎসব হয়, তখন নাকি তিল ধারনের জায়গা থাকে না।
সব মিলিয়ে পুরো ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং লাগলো। ধর্ম তো বোধহয় এরকমই হওয়া উচিত, তাই না ? কোনো জাতপাত থাকবে না, বর্ণ থাকবে না, ঈশ্বর থাকবে না, থাকবে এক এবং একমাত্র সেই মহাজাগতিক শূন্য !
এবার চলুন "ডোকরা গ্রামে" যাওয়া যাক। ডোকরা শিল্পের জন্য বিখ্যাত এই গ্রামটি ঢেঙ্কানলের মূল শহর ছাড়িয়ে বেশ কিছুটা দূরে অবস্থিত। পাহাড়ের পাদদেশে কয়েকঘর ডোকরা-শিল্পীর বাস, তাঁরা পুরুষানুক্রমে এই একই কাজ করে যাচ্ছেন। প্রথমে পোড়ামাটির ছাঁচ তৈরি করে তার উপর কালো মোমের ডিজাইন বানানো হয়, তারপর সেই ডিজাইনের উপর অদ্ভুত কায়দায় গলিত পিতল ঢেলে সেটাকে জমাট করা হয়। জমে যাওয়ার পর পিতলে সেই ছাঁচটা বসে গিয়ে তৈরি হয় অপূর্ব সব মূর্তি।
ইচ্ছে হলে কয়েকটা মূর্তি কিনে নিয়ে যেতে পারেন। এখানে যেটা দরদাম করে একশো টাকায় কিনবেন সেটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত "FIXED PRICE"- ছাপ মারা মহার্ঘ শোরুমে কমসে কম চারশো নিরানব্বই টাকায় কিনতে হবে, তাও আবার সুন্দরী সেলস্ গার্লের সাথে ইংরেজীতে কথোপকথনের টেনশন মাথায় নিয়ে।
এবার কোথায় যাবেন ? সাতকোশিয়া ? নো প্রবলেম, ইচ্ছে হলে যেতেই পারেন। এখান থেকে মাত্র একশো তিরিশ কিলোমিটার, সর্বসাকূল্যে ঘন্টা তিনেক লাগবে। সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যায় আবার ঢেঙ্কানল ফিরতে পারেন, অথবা এখানে দু-তিনদিন কাটিয়ে একেবারে সাতকোশিয়া চলে যেতে পারেন। নেচার ক্যাম্পে দু’দিন অ্যাডভেঞ্চার করে বাড়ি ফিরে যান, সব মিলিয়ে একটা দারুন ট্যুর হয়ে যাবে।
যাইহোক, অনেক অকাজের কথা বললাম, এবার কাজের কথায় আসি। কথাটা হলো যে ঢেঙ্কানলের আসল মজা পেতে হলে ট্যুরিস্ট স্পট ঘুরে কিন্তু লাভ নেই ! যদি সত্যিই আনন্দ পেতে চান তাহলে নিজের মতো ঘুরে বেড়ান, যেদিকে দু'চোখ যায়। দেখবেন উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে ঘুরতে নিজেই কত স্পট আবিস্কার করে ফেলবেন।
রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে দূর পাহাড়ের দিকে তাকান। সামনে বিস্তীর্ণ ক্ষেত, পিছনে পাহাড়, একটু দূরে কূলকূল করে বয়ে যাচ্ছে কোনো নাম না জানা নদী। ওগুলো সব আপনার !
ছুটে চলে যান মাঠে, হাঁটতে থাকুন আলপথ ধরে, নদীর জলে পা নাচাতে নাচাতে তারস্বরে গান ধরুন, হা-হা করে হাসুন, অথবা হৃদয়ের গহীন গোপন কুঠুরিতে দীর্ঘদিন জমিয়ে রাখা দুঃখগুলো কান্নার জলে ভাসিয়ে দিন।
যা ইচ্ছা করুন। সারাজীবন নিজের সাথে অবাধ্যতা করে এসেছেন, আজ অন্তত নিজের কথা শুনুন !
জীবনের কিছু কিছু সময়ে নিজের কাছেও আত্মসমর্পণ করতে হয় !
রাত প্রায় ন'টা। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঘন্টাখানেক আগে সেই যে কারেন্ট চলে গেছে এখনও তার আসার নাম নেই। কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত একটা রোগাপটকা চাঁদ আকাশের এককোণে পিটপিট করছিলো, কিন্তু মস্তান টাইপের ক'টা মেঘ এসে মুহূর্তের মধ্যে তাকে ধরাশায়ী করে ফেলেছে। আশপাশের কোনো বাড়ি থেকে যে একটু আলো আসবে সে সম্ভাবনাও নেই, কারণ কয়েক মাইলের মধ্যে কোনো বাড়িই নেই। মূল শহর থেকে অনেকটা দূরে ঘন জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ের উপর এই একটাই বাড়ি। নাম 'গজলক্ষী প্যালেস',' স্থানীয় লোকেরা বলে রাজবাড়ি। বাড়ির পিছনেই আরেকটা বড় পাহাড়, আর চারিদিকে শুধু জঙ্গল। সেই জঙ্গলে দিনদুপুরে হাতি ঘুরে বেড়ায়।
এই ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে আপনি ঠায় একঘন্টা ধরে একই জায়গায় বসে আছেন। জায়গা বলতে দোতলার খোলা ছাদ, যাকে বাংলায় terrace বলে। আপনার একটু ভয় ভয় করছে, আবার রোমাঞ্চও লাগছে। কিছুক্ষণ আগে অবধি একটা গুমোট ভাব ছিল, কিন্তু এখন বেশ ফুরফুরে হাওয়া বইছে। হাওয়ার মধ্যে কেমন যেন নেশা ধরানো গন্ধ। কিসের গন্ধ এটা ? মহুয়া ফুলের ? এখানে কি মহুয়া গাছ আছে ? থাকতেই পারে ! এত বড় জঙ্গলে মহুয়া গাছ থাকবে না তা কি হয় ? আচ্ছা, কি একটা প্রাণী আছে না যারা মহুয়া ফুল খেতে খুব ভালোবাসে ? ভাল্লুক কি ? নাকি অন্য কিছু ? নাহ, কিছুতেই মনে পড়ছে না। আজকাল আর কিছুই মনে থাকে না। সারাক্ষণ শুধু ডেবিট-ক্রেডিট, সেলসের টার্গেট, বসের ঝাড়, মিটিং, ওদিকে আবার ইউনিয়নের নেতাদের তেল মাখানো----ধুসস ! লাথি মারি অমন চাকরির মুখে। সব ছেড়েছুড়ে একদিন এই জঙ্গলে চলে আসবো। নে শালা, এবার কত ডেবিট ক্রেডিট নিবি নে ! হাঃ হাঃ হাঃ......
এইসব হাবিজাবি চিন্তা করতে করতে আপনি অলস ভাবে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন। টানা লম্বা দরদালান, তার ওপাশে ড্রইংরুম। ড্রইংরুমের টেবিলে একটা মোমবাতি জ্বলছে। কষ্টিপাথরের মতো জমাট কালো অন্ধকার, তার মধ্যে এক রহস্যময় শিখা। শিখাটার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে কেমন যেন গা শিরশির করে, মনে হয় কোনো একচক্ষু প্রেত নির্নিমেষ দৃষ্টিতে আপনাকে দেখছে। ইশ, কয়েকটা ভুতের গল্পের বই আনলে বেশ হতো। বড়দের হরর স্টোরি না, সেই ছোটবেলায় পড়া ভুত-পেত্নীর গল্প, যে গল্পগুলো পড়ে মনে মনে বলতেন - "হে ভগবান, রাত্তিরে যেন হিসু না পায়।"
এখন নাহয় ফ্ল্যাটে থাকেন, কিন্তু তখন তো আর ফ্ল্যাটে থাকতেন না, থাকতেন সেই নিজেদের একতলা বাড়িটাতে। উঠোন পেরিয়ে বাথরুম, তার পিছনে পাঁচিল, আর পাঁচিলের গায়ে একটা ঝাঁকড়া তেঁতুলগাছ। আহা, কি সব দিন ছিল !
শৈশবের কথা ভাবতে ভাবতে আপনি আনমনা হয়ে গিয়েছিলেন, হঠাৎ একটা পায়ের শব্দে চটক ভেঙে গেল। যেন খুব কাছেই কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছে। আপনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকালেন, কিন্তু ঘরের ভিতরের আবছা আলোয় কাউকে দেখতে পেলেন না। এমনই কপাল যে ঠিক সেই মুহূর্তে একটা দমকা হাওয়ায় মোমবাতিটাও নিভে গেল। এখন চারিদিকে শুধু চাপ চাপ অন্ধকার, তার মধ্যে আপনি, আর আপনাকে ঘিরে এক রহস্যময় পদশব্দ - "ঠক, ঠক, ঠক !"
আওয়াজটা ধীরে ধীরে আপনার দিকে এগিয়ে আসছে। বুনো ফুলের গন্ধটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আপনার স্নায়ু অবশ হয়ে আসছে, মনে হচ্ছে এক্ষুনি বোধহয় অজ্ঞান হয়ে যাবেন। শরীরের শেষ শক্তিটুকু জড়ো করে আপনি চেঁচিয়ে উঠতে গেলেন, কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোলো না।
পায়ের শব্দটা এবার থেমে গেছে।
আপনি দম বন্ধ করে অবধারিত নিয়তির প্রতীক্ষা করছেন, ঠিক তখনই কে যেন ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় বলে উঠলো - "ডিনার রেডি হ্যায় সাব। লাগা দুঁ ?"
না, কোনো রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস বা ভূতের গল্প ফাঁদতে বসিনি। অতটা এলেম আমার নেই। যেটা বলছিলাম সেটা আমার নিজেরই অভিজ্ঞতা। যদি আপনিও এই অভিজ্ঞতার শরিক হতে চান তো চলুন আমার সাথে, কটক থেকে মাত্র পঞ্চান্ন কিলোমিটার দূরে ওড়িশার আরেকটা জেলা ঢেঙ্কানলে।
ঢেঙ্কানল জায়গাটা তথাকথিত ট্যুরিস্ট স্পট হিসাবে তেমন পপুলার নয়, আর সেই জন্যই আদিম ভাবটা এখনও হারায়নি। লোকজন এখানে আসে না তা না, তবে তুলনায় কম। যারা আসে তারা সাধারণত একরাত থাকে, বড়জোর দু'রাত। থাকার জন্য ঢেঙ্কানলে কয়েকটা হোটেল আছে বটে, তবে আপনাদের যেখানে নিয়ে যাবো সেটা কোনো হোটেল নয়, প্রাসাদ ! প্রাসাদের নামটা আগেই বলেছি, মনে আছে ? জানি মনে নেই। অচেনা নাম তো, মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে নামটা অচেনা হলেও প্রাসাদটা কিন্তু আপনারা অনেকেই দেখেছেন, কারণ "রয়েল বেঙ্গল রহস্য" সিনেমার শ্যুটিং হয়েছিল এই প্রাসাদেই। নামটা আরেকবার বলে দিচ্ছি - গজলক্ষী প্যালেস। আশা করি এবার আর ভুলবেন না।
প্রাসাদটা মূল শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে একটা নির্জন টিলার মাথায় অবস্থিত। টিলার গা বেয়ে আরেকটা পাহাড় উঠে গেছে। পুরো জায়গাটাই জঙ্গলে ঢাকা, আর সেই জঙ্গলে নাকি হাত বাড়ালেই হাতি ! কথাটা অতিরঞ্জিত তাতে সন্দেহ নেই, তবে হাতি সত্যিই আছে ! বস্তুত হাতির কারণেই প্রাসাদটার নাম "গজলক্ষী প্যালেস।" চলুন এবার তাহলে সেখানে যাওয়া যাক।
হাওড়া থেকে প্রথমে কটক চলুন, তারপর স্টেশন থেকে গাড়ি নিয়ে নেওয়া যাবে। কটক থেকে ঢেঙ্কানলের দৃরত্ব পঞ্চান্ন কিলোমিটার, সময় লাগবে মোটামুটি দেড়ঘন্টা। হাওড়া থেকে ডাইরেক্ট ট্রেনও আছে, তবে হপ্তায় একবার। ইচ্ছে হলে ভুবনেশ্বর থেকেও যেতে পারেন। খুব একটা দূর না, জাস্ট আশি কিলোমিটার।
গাড়িতে যেতে যেতে দৃর থেকে প্রাসাদের লোকেশন দেখেই আপনার চোখ টেরিয়ে যাবে। গেট দিয়ে ঢোকার আগে পর্যন্ত সেই চোখ ট্যারানো ভাব থাকবে, কিন্ত বাড়িটা দেখার পর প্রাথমিক ভাবে একটু হতাশই হবেন। নামে প্রাসাদ হলেও আকৃতিতে একটা বড়সড় বাংলো বই কিছুই না। বাংলোটা তৈরি হয়েছিল রাজামশাইয়ের প্রমোদভবন হিসাবে, তবে বছর কয়েক হলো বাড়ির একটা অংশ homestay হিসেবে চালু করা হয়েছে। বর্তমান কুমারবাহাদুর শ্রী জে. পি. সিংদেও এটার দেখাশোনা করেন, সঙ্গে তাঁর স্ত্রী রাণী নবনীতা। বেশি লোক এখানে আসে না, কারণ জায়গাটার হদিশ খুব বেশি লোক জানে না। যারা আসে তারা অধিকাংশই বিদেশী, সম্ভবত সেই কারণেই ঢেঙ্কানলের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ভাড়াটা লক্ষণীয় ভাবে বেশি। পার ডে পার রুম সাড়ে ছ'হাজার টাকা ভাড়া, দুজনের থাকা এবং তিনবেলা খাওয়া সমেত। এক্সট্রা কেউ গেলে আরো দেড় হাজার লাগবে।
সুযোগ সুবিধা বলতে যে বিশাল কিছু পাবেন তাও না। ঘরগুলো বিশাল, বাথরুমটাও বাড়াবাড়ি রকমের বড়, কিন্তু ঘরে এ.সি. নেই, টিভি নেই, এমনকি জেনারেটর থাকলেও খুব দরকার না হলে সেটা চালানো হয় না। ফরেনারদের কাছে এটাই নাকি জায়গাটার 'USP', কারণ বেশি আধুনিক হলে জঙ্গল-জঙ্গল ভাবটা থাকতো না।
আমরা কোনো ফরেনার নই, নেহাতই ভেতো বাঙালী, অতএব আমরা ভাবতেই পারি যে এত টাকা দিয়ে এখানে থাকতে যাবো কোন দুঃখে ?
প্রশ্নটা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত, যার উত্তরে আমি বলবো স্রেফ একটা কারণেই থাকবেন, সেটা হলো এর লোকেশন। এরকম লোকেশন লাখ টাকা দিয়েও মেলে না। আশেপাশে বাড়িঘর বলতে কিস্যু নেই, টিলার মাথায় শুধু এই একটাই বাড়ি। পিছনে জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়, আর চারিদিকে শুধু জঙ্গল আর জঙ্গল। প্রাসাদের পিছনদিকে কিছুটা গেলেই একটা বড়সড় পুকুর, সেখানে প্রায়ই নাকি হাতিরা জল খেতে আসে।
রাজবাড়ির খাওয়াদাওয়া খুব ভালো। রাণী নবনীতা রাজস্থানের রাজপরিবারের মেয়ে, এদিকে আবার দারুন রাঁধুনি। তাঁর তত্ত্বাবধানেই অতিথিদের রান্নাবান্না হয়। হোটেলের মতো অনেকরকম পদ তা না, তবে সবগুলো পদই ভীষণ সুস্বাদু।
মোটকথা, কল্পনাতীত একটা পরিবেশে তিন-চার দিনের ছুটি কাটানোর জন্য আদর্শ জায়গা এই গজলক্ষী প্যালেস, তবে একটু খরচসাপেক্ষ ঠিকই !
চলুন এবার আপনাদের একটু সাইটসিইং-এ নিয়ে যাই। ঢেঙ্কানলে বেশ কয়েকটি ট্যুরিস্ট স্পট আছে, তবে কোনোটাই বহুল প্রচারিত নয় বলে ভিড়ভাট্টা কম। প্রথমে চলুন কপিলাস মন্দির। পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত এই শিবমন্দিরটি স্থানীয়দের কাছে খুব জাগ্রত স্থান বলে পরিচিত। মন্দিরে ওঠার রাস্তাটা দারুণ। পাকদণ্ডী বেয়ে বেয়ে উঠতে হয়, নিচে ঢেঙ্কানল শহরের বার্ডস্-আই ভিউ। দারুণ লাগে দেখতে !
এরপর আপনাদের যেখানে নিয়ে যাবো তার নাম সপ্তশয্যা। এটাও একটা পাহাড়ের উপর অবস্থিত। জায়গাটার নৈসর্গিক দৃশ্য অত্যন্ত মনোরম, বলাই বাহুল্য। পৌরাণিক মতে এখানে নাকি রামচন্দ্র অ্যান্ড কোং তাঁদের বনবাসকালে সপ্ত দিবস এবং সপ্ত রজনী যাপন করেছিলেন। সেই সময়ে সপ্তর্ষিমন্ডলের সেই সাত ঋষি এখানে এসে যজ্ঞ করেন। জায়গাটায় সব মিলিয়ে সাতটা পাহাড় আর সাতটা ঝর্ণা আছে, তবে আমি গুনে দেখিনি। আপনাদের ইচ্ছে হলে গুনে নিন।
এরপর যেখানে আমরা যাবো সেটা সত্যি বেশ ইউনিক জায়গা। জায়গাটার নাম "জোরন্দা" (Joranda), ঢেঙ্কানল থেকে আনুমানিক বত্রিশ কিলোমিটার দূরে। এটা হলো বিশ্বের নবীনতম ধর্মের পীঠস্থান, যার নাম "মহিমা ধর্ম।" এই ধর্মের লোকজন কোনো জাতপাত মানে না, বর্ণ মানে না, এমনকি সাকার বা নিরাকার কোনো ঈশ্বরও মানে না। যাঁকে পূজো করা হয় তিনি হলেন "শূন্য"...... মহাশূন্য !
মন্দির আছে, তবে তার ভিতরে কিস্যু নেই। সব ভোঁ-ভাঁ, শূন্য। সেই শূন্য মন্দিরকেই এঁরা পুজো করেন। যাঁরা আছেন তাঁরা সবাই কৌপীনধারী সাধু, আর বিশাল তাঁদের জটা। মাঘ মাসে এখানে বাৎসরিক উৎসব হয়, তখন নাকি তিল ধারনের জায়গা থাকে না।
সব মিলিয়ে পুরো ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং লাগলো। ধর্ম তো বোধহয় এরকমই হওয়া উচিত, তাই না ? কোনো জাতপাত থাকবে না, বর্ণ থাকবে না, ঈশ্বর থাকবে না, থাকবে এক এবং একমাত্র সেই মহাজাগতিক শূন্য !
এবার চলুন "ডোকরা গ্রামে" যাওয়া যাক। ডোকরা শিল্পের জন্য বিখ্যাত এই গ্রামটি ঢেঙ্কানলের মূল শহর ছাড়িয়ে বেশ কিছুটা দূরে অবস্থিত। পাহাড়ের পাদদেশে কয়েকঘর ডোকরা-শিল্পীর বাস, তাঁরা পুরুষানুক্রমে এই একই কাজ করে যাচ্ছেন। প্রথমে পোড়ামাটির ছাঁচ তৈরি করে তার উপর কালো মোমের ডিজাইন বানানো হয়, তারপর সেই ডিজাইনের উপর অদ্ভুত কায়দায় গলিত পিতল ঢেলে সেটাকে জমাট করা হয়। জমে যাওয়ার পর পিতলে সেই ছাঁচটা বসে গিয়ে তৈরি হয় অপূর্ব সব মূর্তি।
ইচ্ছে হলে কয়েকটা মূর্তি কিনে নিয়ে যেতে পারেন। এখানে যেটা দরদাম করে একশো টাকায় কিনবেন সেটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত "FIXED PRICE"- ছাপ মারা মহার্ঘ শোরুমে কমসে কম চারশো নিরানব্বই টাকায় কিনতে হবে, তাও আবার সুন্দরী সেলস্ গার্লের সাথে ইংরেজীতে কথোপকথনের টেনশন মাথায় নিয়ে।
এবার কোথায় যাবেন ? সাতকোশিয়া ? নো প্রবলেম, ইচ্ছে হলে যেতেই পারেন। এখান থেকে মাত্র একশো তিরিশ কিলোমিটার, সর্বসাকূল্যে ঘন্টা তিনেক লাগবে। সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যায় আবার ঢেঙ্কানল ফিরতে পারেন, অথবা এখানে দু-তিনদিন কাটিয়ে একেবারে সাতকোশিয়া চলে যেতে পারেন। নেচার ক্যাম্পে দু’দিন অ্যাডভেঞ্চার করে বাড়ি ফিরে যান, সব মিলিয়ে একটা দারুন ট্যুর হয়ে যাবে।
যাইহোক, অনেক অকাজের কথা বললাম, এবার কাজের কথায় আসি। কথাটা হলো যে ঢেঙ্কানলের আসল মজা পেতে হলে ট্যুরিস্ট স্পট ঘুরে কিন্তু লাভ নেই ! যদি সত্যিই আনন্দ পেতে চান তাহলে নিজের মতো ঘুরে বেড়ান, যেদিকে দু'চোখ যায়। দেখবেন উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে ঘুরতে নিজেই কত স্পট আবিস্কার করে ফেলবেন।
রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে দূর পাহাড়ের দিকে তাকান। সামনে বিস্তীর্ণ ক্ষেত, পিছনে পাহাড়, একটু দূরে কূলকূল করে বয়ে যাচ্ছে কোনো নাম না জানা নদী। ওগুলো সব আপনার !
ছুটে চলে যান মাঠে, হাঁটতে থাকুন আলপথ ধরে, নদীর জলে পা নাচাতে নাচাতে তারস্বরে গান ধরুন, হা-হা করে হাসুন, অথবা হৃদয়ের গহীন গোপন কুঠুরিতে দীর্ঘদিন জমিয়ে রাখা দুঃখগুলো কান্নার জলে ভাসিয়ে দিন।
যা ইচ্ছা করুন। সারাজীবন নিজের সাথে অবাধ্যতা করে এসেছেন, আজ অন্তত নিজের কথা শুনুন !
জীবনের কিছু কিছু সময়ে নিজের কাছেও আত্মসমর্পণ করতে হয় !
No comments:
Post a Comment